Newsroom
এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন অর্ধেক প্রশ্নে পরীক্ষা ও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন সিদ্ধান্ত
Published: 20 Aug 2024এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার অবশিষ্ট বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে এবং পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হবে। আজ মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষা বোর্ডগুলো প্রাথমিকভাবে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল। তবে পরীক্ষার্থীরা দাবী করছেন, ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষাগুলোর ভিত্তিতে ফলাফল প্রকাশ করা হোক।
আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা বলেন, চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনে তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন এবং পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটেছে, ফলে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তত নন।এ দাবিতে পরীক্ষার্থীরা গতকাল সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সন্ধ্যায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষা কোথায় কীভাবে?
Published: 19 Aug 2024বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল দেশ। ব্যবসায় শিক্ষা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। একটি দেশের উন্নয়নে ব্যবসা অপরিমেয় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের ফলে ব্যবসার আওতা যেমন বিস্তার লাভ করেছে, তেমনই ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষার পরিধিও বিস্তৃত হয়েছে। এতে ব্যবসা—বাণিজ্যে সুষ্ঠু জ্ঞানের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাপনা নীতি ও কলাকৌশল—সংক্রান্ত জ্ঞানই ব্যবসায় শিক্ষা। এ শিক্ষা সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, কাঙ্ক্ষিত খাতে বিনিয়োগ এবং অর্জিত আয়ের যথাযথ ব্যবহারের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষার সূচনা ব্রিটিশ আমল থেকেই। তবে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এ অঞ্চলে আনুষ্ঠানিক ব্যবসায় শিক্ষার পথ সুগম হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর সরকার বাণিজ্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। বিশেষজ্ঞরা এ সময় বাণিজ্য শিক্ষার পরিবর্তে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা চালু করার সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা তিন স্তর বিশিষ্ট; প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর এবং উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক স্তরে ব্যবসায় শিক্ষার তেমন কোনো বিশেষ সুযোগ নেই। এদেশে ব্যবসায় শিক্ষা শুরু হয় মূলত মাধ্যমিক স্তর থেকে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই ধরনের বিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অধ্যয়নের সুযোগ আছে; জেনারেল ও উন্মুক্ত। উভয় ক্ষেত্রে কোর্সের ব্যাপ্তি ২ বছর। তবে সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিকাল ৫ বছর।
উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনার্স (স্নাতক/ সম্মান), মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর), ডক্টরাল প্রভৃতি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে অনার্স ডিগ্রি ৪ বছর মেয়াদি, মাস্টার্স ডিগ্রি ১/২ বছর মেয়াদি। পিএইচডি বা ডক্টরাল ডিগ্রি ৩—৫ বছর মেয়াদি হয়। এ ছাড়াও পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমাসমূহে ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমার মেয়াদ সাধারণত ১ বছর। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে যারা ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ে গ্রাজুয়েট নয়, তাদের জন্য ডিপ্লোমার মেয়াদ ১.৫ বছর হতে পারে। আবার কিছু কিছু ডিপ্লোমার ব্যাপ্তি ১ বছরের কম সময় হয়।
বাংলাদেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় সম্পর্কিত নিম্নোক্ত বিভাগসমূহ পড়ানো হয়—
- অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস
- ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ
- ফিন্যান্স
- মার্কেটিং
- ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স
- ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস
- ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
- ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস
- অর্গানাইজেশনাল স্ট্রাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ
- হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
- ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট
- ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং
- এনট্রাপ্রেনিউরশিপ
- সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
সাধারণত ব্যবসায় শিক্ষা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র—ছাত্রীরা বিবিএ করতে পারে, তবে কিছু সংখ্যক মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার ছাত্র—ছাত্রীরাও এ ডিগ্রি অর্জন করতে পারে।
যারা আইবিএ, বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করতে চায় তাদের জন্য বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএ, বিবিএ ও আইবিএ, এমবিএ ডিগ্রি প্রদান করে। সকল শাখার ছাত্র—ছাত্রী এতে আবেদন করতে পারে। যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ আছে তাদের তালিকা নিচে দেওয়া হলো—
- আইবিএ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- আইবিএ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
- আইবিএ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
- আইবিএ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
অ্যাকাডেমি অব বিজনেস প্রফেশনালস (এবিপি) ব্যবসায় শিক্ষাবিষয়ক একটি উদীয়মান প্রশিক্ষণ ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান। এবিপি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পিজিডি ও সার্টিফিকেশন কোর্স চালু করেছে। এসব পিজিডির ব্যাপ্তিকাল সাধারণত ৬ মাস। ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালরা এসব পিজিডি করে থাকেন।
পিজিডিসমূহ:
- পিজিডি অন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
- পিজিডি অন লজিস্টিক অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট
- পিজিডি অন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
- পিজিডি অন ইসলামিক ফিন্যান্স প্রাকটিস
- পিজিডি অন সফ্ট স্কিল অ্যান্ড লিডারশিপ ডিভেলোপমেন্ট
- পিজিডি অন রিস্ক অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট
- পিজিডি অন সেলস অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং
এবিপিতে পিজিডি ছাড়াও বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স চালু আছে। সার্টিফিকেট কোর্সগুলো নিম্নরূপ—
- সার্টিফিকেট অন ইসলামিক ব্যাংকিং প্রডাক্ট
- সার্টিফিকেট অন এসএমই এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ
- সার্টিফিকেট অন ইসলামিক ফিনান্সিয়াল মডেল
- সার্টিফিকেট অন ডিজিটাল মার্কেটিং
- সার্টিফিকেট অন ওয়ারহাউস অ্যান্ড ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট
- সার্টিফিকেট অন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি
- সার্টিফিকেট অন ইসলামিক ক্যাপিটাল মার্কেট অ্যান্ড সুকুক
- সার্টিফিকেট অন ফিন্যান্স ফর নন ফিনান্সিয়াল ম্যানেজার
- সার্টিফিকেট অন মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়াশন
এ সকল সার্টিফিকেট কোর্স সাধারণত ২ মাস মেয়াদি হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ব্যবসায়বিষয়ক বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব প্রশিক্ষণ কোর্সে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে। এ সকল প্রশিক্ষণ কোর্স সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয়। যেমন : ৫—৭ দিন।
স্কিটি নিম্নোক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে
- নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন
- বুক কিপিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং
- হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
- ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট
- এসএমই ম্যানেজমেন্ট
- অফিস ম্যানেজমেন্ট
- এক্সপার্ট মার্কেটিং
ইসলামিক ফিনান্সের এর জন্য বাংলাদেশে ইসলামিক ফিন্যান্স একাডেমি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানটি (আইএফএসি) বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
এসব প্রশিক্ষণে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ নিম্নরূপ :
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন সুকুক (২.৫ মাস)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ইসলামিক ব্যাংকিং (২.৫ মাস)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ইসলামিক ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স (৬ মাস)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ই—কমার্স অ্যান্ড শরিয়াহ্ (৬ মাস)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ফ্যামিলি ইকোনমিকস অ্যান্ড কনজুগাল লাইফ (৫ মাস)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ইসলামিক ফিনান্সিয়াল কন্ট্রাক্ট (৬ মাস)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ইসলামিক প্রফেশনালস অ্যাকাউন্টান্টস (শুধু অ্যাকাউন্টান্টস ও অডিটর করতে পারে, (৫ মাস মেয়াদি)
- সার্টিফিকেট কোর্স ইন ইসলামি ইকোনমিক্স প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্রাকটিস (৬ মাস)
বিআইবিএমএ বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু আছে। এগুলো মূলত ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য ট্রেইনিং প্রোগ্রাম। এসব প্রোগ্রামের মধ্যে আছে—
- সার্টিফায়েড ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স প্রফেশনালস (২৮ সপ্তাহ)
- সার্টিফায়েড এক্সপার্ট ইন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (৯ মাস)
- সার্টিফায়েড এক্সপার্ট ইন ক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট (৬ মাস)
- সার্টিফায়েড এক্সপার্ট ইন ট্রেড সার্ভিসেস (৬ মাস)
- সার্টিফায়েড এক্সপার্ট ইন ই—ব্যাংকিং (৬ মাস)
- সার্টিফায়েড এক্সপার্ট ইন অ্যান্টি—মানিলাউন্ডারিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ক্রাইম (৬ মাস)
মাস্টার্স শেষ করার পর অনেকেই উচ্চতর গবেষণার জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন স্তরে পিএইচডি করতে পারে। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩—৫ বছর মেয়াদে পিএইচডি ডিগ্রি করতে পারে।
পিএইচডি সাধারণত অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারের জন্য করা হয়। পিএইচডি ছাড়াও ডিবিএ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে ৩—৫ বছর সময় লাগতে পারে। DBA সাধারণত প্রফেশনাল ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা করে থাকেন।
উপরোক্ত ডিগ্রিসমূহ ছাড়াও কেউ প্রফেশনাল লেবেলে CA (Chartered Account), CMA (Cost and Management Accounting) প্রভৃতি পেশাগত ডিগ্রি অর্জন করতে পারে। এক্ষেত্রে CA ডিগ্রি প্রদান করে CAB এবং CMA ডিগ্রি প্রদান করে CMAB প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়াও চার্টার্ড সেক্রেটারিজ সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারে। এটি প্রদান করে CSB । এ সকল প্রফেশনাল কোর্সে সাধারণত গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ বর্তমানে প্রকট বেকার সমস্যার প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য দ্রুত শিল্পায়ন ও ব্যবসায় উন্নয়ন আবশ্যক। দক্ষ ব্যবস্থাপক ও শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য ব্যবসায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দেশের শ্রমবাজারে ব্যবসায় শিক্ষা গ্রাজুয়েটদের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল এবং ব্যবসায় শিক্ষায় উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও গবেষক দরকার।
আরিফুল ইসলাম
লেখক: সহকারী অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মানসিকভাবে বিধ্বস্ত শিক্ষার্থীরা কিভাবে ফিরবে পড়ালেখায়।
Published: 18 Aug 2024দীর্ঘ বিরতির পর আজ আবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে বা এখনো যাচ্ছে, এখানে তরুণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিও তাঁদের বেশি। দীর্ঘ সময় এই মানসিক অস্থিরতা সঙ্গে নিয়ে চললে বাধাগ্রস্ত হতে পারে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন ও কাজকর্মে ফেরার ক্ষেত্রে তাঁদের দিক থেকে যেমন সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন, তেমনি অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয় কী…
রাজনৈতিক ট্রমা ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা:
কোনো রাজনৈতিক ঘটনা ও সহিংসতায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের ভেতরে যে আতঙ্ক, অসহায়ত্ব, মানসিক উত্তেজনা, স্তব্ধতা ও অনিশ্চয়তার জন্ম হয়, তাকে বলে রাজনৈতিক ট্রমা। এ ধরনের ঘটনায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন ও কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সেই সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ায় সংকট- পরবর্তী মানসিক চাপের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন ভয়, রাগ, অনুতাপ, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, বিষণ্ণতা, অসহায়ত্ব, ঘুমের সমস্যা, অনিরাপদ বোধ করা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, আক্রমণাত্মক আচরণ করা, প্রতিশোধপ্রবণ হওয়া, ভিন্নমতের মানুষকে সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি। এসব উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং তা মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহযোগিতা করবে।
স্ক্রিন টাইম কমানো:
সংকট ছাড়া অন্যান্য সময়েও অতিরিক্ত 'স্ক্রিন টাইম' আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। আর সংকটকালে টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া সহিংসতার খবর ও ঘটনা সম্পর্কে অনবরত তথ্য আমাদের মস্তিষ্ককে স্থির হতে দেয় না। তাই দৈনন্দিন কাজে ফিরতে হলে সবার আগে প্রয়োজন স্ক্রিন টাইম কমানো- ইন্টারনেট থেকে বেরিয়ে নিজের জীবন, কাজ ও সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়া।
পর্যাপ্ত ঘুম:
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের মনকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে, কর্মোদ্দীপ্ত রাখে। ভালো ঘুমের জন্য ঘুমের নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা এবং ঘুমাতে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। দিনের বেলা ঝকঝকে আলোয় থাকা আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে ঘরের আলো কমিয়ে মুঠোফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ রাখাও একটি স্বাস্থ্যকর চর্চা।
সুষম খাদ্যাভ্যাস:
খাদ্যাভ্যাস আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। প্রতি বেলার খাবারে অন্তত ৫০ শতাংশ শাকসবজি-ফলমূল রাখা উচিত। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশ আমিষ (মাছ, মাংস, ডাল, ডিম ইত্যাদি) ও ২৫ শতাংশ শর্করা (ভাত, রুটি, পাস্তা ও বিভিন্ন শস্যদানা) জাতীয় খাবার রাখা দরকার।
আন্তরিক যোগাযোগ:
রাজনৈতিক ট্রমার একটি অন্যতম বড় ক্ষতি হলো মতের অমিলের কারণে কাছের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীকে হারানো। একটি সংকটে নানা পক্ষ (পক্ষ, বিপক্ষ, নিরপেক্ষ, উভয় পক্ষ, কেবলই ভুক্তভোগী ইত্যাদি) থাকতে পারে। নানা দিক থেকে নানা মত আসতে পারে। নিজের মতের সঙ্গে অন্য কারও মত না মিললে আক্রমণাত্মক না হয়েও আন্তরিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। ব্যক্তিগত সম্পর্ককে সুরক্ষিত রেখেও ভিন্নমত পোষণ করা বা গঠনমূলক সমালোচনা করা যেতে পারে। মানসিক অস্থিরতার কারণে তা সম্ভব না হলে সেই সম্পর্ক থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়া যেতে পারে বা এড়িয়ে চলা যেতে পারে। মুহূর্তের উত্তেজনায় ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
কাজগুলো ছোট ছোট অংশে ভাগ করা ও অগ্রগতি খেয়াল করা:
সংকট কাটিয়ে কাজে ফেরার জন্য একটি বাস্তবসম্মত রুটিন করা যেতে পারে; এমন রুটিন যেটি অনুসরণ করা আমার সাধ্যের মধ্যে। শুরুতেই নিজেকে কাজের চাপ দিলে, জমে থাকা পড়ালেখা বা কাজগুলো একসঙ্গে করতে চাইলে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না, বরং সৃষ্টি হয় হতাশা। তাই কাজগুলো ছোট অংশে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে এবং একটা একটা করে সম্পন্ন করা যেতে পারে।
মন শান্ত রাখা:
মন অশান্ত হলে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, মনোযোগী ধ্যান বা যোগাসন করে মন শান্ত করা যেতে পারে। নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম আমাদের মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমায়, বাড়ায় মানসিক প্রশান্তি এবং শরীর ও মস্তিষ্ককে শিথিল করে। আমাদের দৈনন্দিন কাজে মনোযোগী থাকতে সহযোগিতা করে।
পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা:
শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ফেরার ক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে এবং যথাযথ বিকাশের জন্য বাড়িতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিকাশ-সহায়ক পরিবেশ থাকা আবশ্যক। শিক্ষার্থীরাও যেন সহয়তা চাইতে দ্বিধা বোধ না করেন। সংকট-পরবর্তী সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার পরও যদি মানসিক চাপ না কমে, তাহলে পেশাগত কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি সেবা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কাউন্সেলিং সেবার ব্যবস্থা করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
ব্যবসায় প্রশাসনে বিদেশে উচ্চশিক্ষার খোঁজখবর
Published: 17 Aug 2024ব্যবসায় প্রশাসনে বিদেশে উচ্চশিক্ষার খোঁজখবর
মাসুদ কবীর
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বর্তমানে তরুণদের জন্য খুব রোমাঞ্চকর একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে এখন বেশি পরিমাণে শিক্ষার্থী যাচ্ছে বাইরের দেশগুলোতে পড়তে। সাধারণত STEM (SCIENCE, TECHNOLOGY, ENGINEERING, MATH/MEDICINE) প্রোগ্রামগুলোতে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়ার হার বেশি হলেও বর্তমানে ব্যবসায় প্রশাসন থেকে এ সংখ্যাটা কম নয়। বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় প্রশাসনের প্রতিনিয়ত চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বৈচিত্র্য এবং চাকরিতে বর্ধিত ক্ষেত্র এ বিভাগের আবেদনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশের বাইরে ব্যবসায় প্রশাসনে ভর্তি বিষয়টিকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। নর্থ আমেরিকা— যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা। ইউরোপ—জার্মানি, যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ। এশিয়া—চীন, জাপানসহ অন্যান্য দেশ।
এই লেখাতে মূলত আমরা প্রথম দুইটা পার্ট নিয়ে আলোচনা করব। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোতে বৃত্তির বিষয়ে।
প্রথমেই বলে নেই ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থেকে ব্যাচেলর করে (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা বিবিএ ডিগ্রি নামে, যা অত্যধিক পরিচিত) দেশের বাইরে পড়ার সুযোগ বর্তমান সময়ে অনেক বেড়ে গেছে। দেশে বিবিএ করে দেশের বাইরে আপনি মূলত চারটি ডিগ্রির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
১. মাস্টার্সর্ অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ
২. মাস্টার্স অব আর্ট বা এমএ
৩. মাস্টার্স অব সায়েন্স বা এমএস
৪. ডক্টরেট ডিগ্রি বা পিএইচডি
ধরা যাক, আপনি মার্কেটিং—এ বিবিএ করেছেন দেশের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেক্ষেত্রে আপনি উপরোক্ত যেকোনো বিষয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনেকেই এসব না জানার কারণে ব্যবসায় প্রশাসন থেকে দেশের বাইরে পড়ার সুযোগ কম এই ধারণা নিয়ে থাকেন, যা সত্য নয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এখন আসি আপনি কোন কোন সাবজেক্টে আবেদন করতে পারবেন:
এই কথার উত্তর দেওয়াটা একটু কঠিন। মোটের ওপর বললে আপনি মোটামুটি সব ধরনের সাবজেক্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অভারওল এমবিএ ডিগ্রি দিয়ে থাকে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পেশালাইজড এমবিএ ডিগ্রি দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি আবেদনের সময় হয়তো স্পেসিফিক করে দিতে পারেন। অথবা পড়া শুরু করার পর নিজের সুবিধামতো বেছে নিতে পারেন। এরপরও আপনাদের সুবিধার্থে আমি বিভিন্ন মেজর ঘেঁটে যেসব সাবজেক্টে আবেদন করতে পারবেন তা তুলে ধরছি:
১.মার্কেটিং : মার্কেটিং, মার্কেটিং অ্যানালাইসিস/অ্যানালিটিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, স্যোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, পাবলিক রিলেশন্স, কমিউনিকেশনস, অ্যাডভারটাইজিং, মার্কেটিং ম্যানেজম্যান্ট, অগার্নাইজেশনাল বিহেভিয়ার, স্পোর্টস মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইন ইত্যাদি।
২.ফাইন্যান্স : ফাইন্যান্স, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইলিস/অ্যানালিটিকস, ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজম্যান্ট, রিয়েল এস্টেট ম্যানেজম্যান্ট, ফাইন্যান্সিয়াল বিহেভিয়ার, ডাটা অ্যানালাইসিস, বিজনেস ফাইন্যান্স, পারসনাল ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজম্যান্ট/প্রোগ্রাম ইত্যাদি।
৩.অ্যাকাউন্টিং : অ্যাকাউন্টিং, অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ম্যানেজেরিয়াল অ্যাকাউন্টিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যানালাইসিস, অ্যাডভান্সড অ্যাকাউন্টিং, কস্ট অ্যাকাউন্টিং, ট্যাক্সেশন, এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকাউন্টিং, অডিটিং ইত্যাদি।
৪.ম্যানেজম্যান্ট : বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজম্যান্ট, মার্কেটিং ম্যানেজম্যান্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজম্যান্ট, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট, ইনফরমেশন টেকনোলজি ম্যানেজম্যান্ট, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট, রিটেইল ম্যানেজম্যান্ট, অগার্নাইজেশন লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ম্যানেজম্যান্ট, ডাটা ম্যানেজম্যান্ট ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, আপনি আন্ডারগ্রাজুয়েটে যে সাবজেক্টেই পড়–ন না কেন, যথাযথভাবে যুক্তি খণ্ডন সাপেক্ষে আপনি যেকোনো সাবজেক্টে মুভ করতে পারবেন। ধরুন, আপনি মার্কেটিং—এ পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু আপনার কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি খুব আগ্রহ এবং আপনি কাজও পারেন বেশ ভালো। সেক্ষেত্রে আপনি অনায়াসে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্সের জন্য অনায়াসে আবেদন করতে পারেন। এ ধরনের দু—একটা কোর্স বা সার্টিফিকেশন করা থাকলে এতে আপনি আরো ভালোভাবে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারবেন। সুতরাং আপনি মার্কেংটিং এর শিক্ষার্থী হয়ে যে ডাটা সায়েন্সে আবেদন করা যাবে না এটা কখনো ভাববেন না। উচ্চশিক্ষার দ্বার সবার জন্য খোলা।
এখন আসি নর্থ আমেরিকা (কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র)’তে পড়ার বিষয়ে:
অন্যান্য দেশে সেন্ট্রালি স্কলারশিপ থাকলেও নর্থ আমেরিকাতে সেন্ট্রালি এর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদা করে স্কলারশিপ থাকে এবং এই স্কলারশিপের পরিমাণ কয়েকশো মিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে। এখানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে এবং মোটামুটি বিজনেস স্কুলগুলোতে আন্ডারগ্র্যাডে শিক্ষার্থী অনেক বেশি হয়ে থাকে। দেখা যায় যে, ক্লাসগুলো ঠিকঠাক পরিচালনার জন্য অনেক শিক্ষকেরই সহকারী প্রয়োজন হয় এবং যারা মাস্টার্স ও পিএইচডি লেভেলে পড়াশোনা করছেন, তারা এক্ষেত্রে শিক্ষক সহকারী (টিচিং এসিসট্যান্ট) হিসেবে কাজ করে থাকেন। টিচিং এসিসট্যান্টের কাজ মূলত গ্রেডিং, হলে গার্ড দেওয়া, শিক্ষার্থীদের ইমেইলের রিপ্লে দেওয়া। টিচিং এসিসট্যান্ট একধরনের গ্র্যাজুয়েট এসিসট্যান্টশিপ। এ ছাড়াও আরও দুই ধরনের এসিসট্যান্টশিপ রয়েছে। রিসার্চ এসিসট্যান্ট ও গ্রাজুয়েট এসিসট্যান্ট। রিসার্চ এসিসট্যান্টরা সাধারণ কোনো প্রফেসরের রিসার্চের কাজে সহযোগিতা করেন। অন্যদিকে গ্র্যাজুয়েট এসিসট্যান্ট ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। এসিসট্যান্টশিপ পেলে অন্য কোনো কাজের সুযোগ থাকে না। এসিসট্যান্টশিপ পেলে সাধারণত সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা সময় দেওয়া লাগে। এসিসট্যান্টশিপের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো— এতে করে আপনার বিশাল পরিমাণ টিউশন ফি মওকুফ হয়ে যায় এবং মাসিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ স্টাইপেন্ড পাওয়া যায়। এই স্টাইপেন্ডে আপনার চলার খরচ বহন করা যায়। এজন্য ইদানীং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে শিক্ষার্থীরা প্রচুর পরিমাণে আবেদন করছেন। এসিসট্যান্টশিপের জন্য সরকার বা কারো কাছে ধরনা দেওয়া লাগে না। এটা বিভাগের একান্ত বিষয়। আপনার বিভাগের যিনি হেড (গ্রাজুয়েট কর্ডিনেটর বলা হয়ে থাকে) তাঁকে ইমেইল করে যোগাযোগ করলে দেখা যায় এসিসট্যান্টশিপ পাওয়া যায়।
এসিসট্যান্টশিপ দুইভাবে ম্যানেজ করা যায়।
১.প্রফেসর ইমেইল করে
২.সেন্ট্রালি ইমেইল করে
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস প্রোগ্রামগুলোতে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডিং মূলত সেন্ট্রালি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রফেসরকে আলাদাভাবে ইমেইলের কোনো প্রয়োজন হয় না। সাধারণত বিভাগের যিনি প্রোগ্রাম কর্ডিনেটর/ গ্রাজুয়েট কর্ডিনেটর, উনাকে ইমেইল করে যোগাযোগ করলে এসিসট্যান্টশিপ মেলে। সেক্ষেত্রে প্রথম ইমেইলে আপনার পরিচয়, ব্যাকগ্রাউন্ড ও সেইসাথে সিভি এড করে দিয়ে এপ্রোচ করলে ভালো সাড়া পাওয়া যায়।
ইউনিভার্সিটি খোঁজা
কানাডাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা হাতেগোনা হলেও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করব তা ভাবা নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫০০—এর মতো। দেখা যায় যে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে বাকি সবাই একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে চলে কে কার থেকে কত ভালো করতে পারে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে যারা পড়তে আসেন তাদের বেশির ভাগেরই বড় একটা সময় যায়, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করব তা নিয়ে। সেক্ষেত্রে আমার ছোটোখাটো সাজেশন হলো:
১.আপনার আশেপাশের কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে থাকেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করুন যে, তিনি কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন। তার লিস্টগুলো আপনি টুকে নিন। এভাবে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে, আপনার হাতে ১৫/২০—এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চলে আসছে। এইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট দেখে নিন। এভাবে করলে আপনার সময় অনেক বেঁচে যাবে।
২. US news এবং Times higher Education —এর র্যাংকিং ফলো করতে পারেন।
৩.বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি বিস্তারিত তথ্য পাবেন। নরমালি সার্চ দিলেই সব তথ্য চলে আসে। যেমন ধরুন, আপনি লিখলেন “the University of Miami Business School Admission Requirements” এতে দেখবেন আপনার তথ্য পেয়ে গেছেন।
আবেদন
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক বাছাইয়ের পর আপনার কাজ হবে গ্রাজুয়েট কর্ডিনেটরকে ইমেইল করা। এরপর তার ফিডব্যাকের ওপর ভিত্তি করে আপনি তার কাছে ফান্ডিং ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। পজিটিভ ফিডব্যাক পেলে আপনার উচিত হবে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে যা যা লাগে মূলত—
- সিভি।
- টেস্ট স্কোর: জিম্যাট/জিআরই (কোভিডের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগে না। তবে জিআরই/জিম্যাট থাকলে ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে বিজনেস স্কুল গুলা সাধারণত জিআরই/জিম্যাট বাধ্যতামূলক করে রাখে)।
- স্টেটমেন্ট অব পারপাস (কেন আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবজেক্টে পড়তে চান তা লেখা লাগে)।
- সকল অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশিট।
- ল্যাঙ্গুয়েজ স্কোর: আইইএলটিস বা টোফেল।
- রিকমেন্ডেশন লেটার (২/৩টা)।
- ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসিসট্যান্টশিপের জন্য আলাদা আবেদন করা লাগে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগে না। এটা ওয়েবসাইটে লেখাই থাকে।
একটা কথা উল্লেখ্য যে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে GRE/GMAT লাগে। ইউরোপ বা এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে তা লাগে না।
ইউরোপের দেশগুলোতে মাস্টার্স : ইউরোপের দেশগুলোতে শিক্ষার্থী যাওয়ার হার তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে ইংরেজি ভাষাভাষীর দেশ ইংল্যান্ডে পড়তে যাওয়া তুলনামূলক অন্যান্য দেশ থেকে সহজ। ইংল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় বেশি হওয়ার কারণে সাবজেক্টের ভিন্নতাও বেশি। প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থীও যাচ্ছেন ইংল্যান্ডে। তবে ইংল্যান্ডে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপের পরিমাণ খুবই কম। ব্রিটিশ সরকারের কিছু সরকারি বৃত্তি হলো— Commonwealth Scholarship and Fellowship Plan (CSFP), British Chevening Scholarships for International Students, and University Research Scholarships (URS). এর বাইরে মেধাভেদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা স্কলারশিপ রয়েছে।
জামার্নিতে সাধারণত কোনো টিউশন ফি নেই। তবে জার্মানিতে টিকতে হলে আপনাকে জামার্ন ভাষা শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। জার্মান সরকারের স্কলারশিপের নাম DAAD Scholarship (German Academic Exchange Service)। তবে এই স্কলারশিপ পেতে আপনাকে দুইবছরের মতো কাজের/চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর বাইরে হাঙ্গেরি সরকারের স্কলারশিপের নাম Stipendium Hungaricum. তুর্কিয়ে সরকারের স্কলারশিপের নাম Türkiye Scholarships. অন্যদিকে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেনেও পড়তে যাওয়ার হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।
The Erasmus Mundus Scholarship Programme হলো ইউরোপের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপের আওতায় প্রতিবছর শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়তে যায়। ইরাসমাস মুন্ডুস—এর আওতায় একজন শিক্ষার্থী ইউরোপের তিনটি দেশের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সেমিস্টার পড়ার সুযোগ পায়। শিক্ষার্থীর বিমানভাড়াসহ সব ধরনের খরচ বহন করে থাকে ইরাসমাস কতৃর্পক্ষ।
এশিয়া মহাদেশে উল্লেখজনক হারে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে:
জাপান: Japanese Government Scholarship (Monbukagakusho: Mext), both for Undergraduate and Post Graduate Studies (MS and Ph.D). For Post Doctoral Scholarship: Japan Society for the Promotion of Science (JSPS) Fellowship.
চীন: China Scholarship Council (CSC) Scholarships.
দক্ষিণ কোরিয়া: Korean Government Scholarship Programme (KGSP) for Undergraduate and Post Graduate Studies.
মালয়েশিয়া: Malaysia International/Governmental Scholarship (MIS) for MS, Ph.D. and Post Doctorate.
ভারত: ICCR
কাতার: Hammad Bin Khalifa University Scholarship সহ অন্যান্য দেশ।
অস্ট্রেলিয়া সরকারও প্রচুর পরিমাণে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এসব তথ্য জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো— গুগলে সার্চ দিয়ে এসব স্কলারশিপের জন্য প্রয়োজনীয় রিকয়ারমেন্ট জেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা ও পরে আবেদন করা।
কোন বর্ষ থেকে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত?
দেশের বাইরে পড়তে আসার ইচ্ছা থাকলে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে নিজেকে গবেষণার দিকে মনোনিবেশ করা। গবেষণা মানে যে শুধু ল্যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থেকে এপ্রোন পরে গবেষণা করতে হয় তা কিন্তু নয়। গবেষণার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। তার মধ্যে এটি একটি। তবে বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের গবেষণার ধরন ততটা ল্যাবকেন্দ্রিক নয়। হিউম্যান সাইকোলজি খুব বড় একটা পার্ট বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের গবেষণার জন্য। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন কেনাকাটার হার কেমন, এটাও গবেষণার ভালো একটা টপিক। নিজেকে প্রথম থেকেই গবেষণামনা করলে পরে এর সুফল পাওয়া যায়। এর মানে যে কাড়ি কাড়ি গবেষণা পেপার বের করতে হবে তা নয়। মানে নিজেকে আগ্রহী করে তোলা।
এর বাইরে তৃতীয় বর্ষ থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে প্রস্তুত করা যেতে পারে। প্রথম প্রস্তুতি হিসেবে পাসপোর্ট করা, নিয়মিত বিভিন্ন কনফারেন্স বা প্রতিযোগিতাতে অংশ নেওয়া, IELTS, GRE/GMAT এ র প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা, ইউনিভার্সিটি লিস্টিং করা ইত্যাদি। একটা এক্সেল শিটে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের শেষ ডেট কবে তাও লিপিবদ্ধ করে রাখলে প্ল্যান মোতাবেক কাজ করলে সুবিধা।
লেখক:
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসটেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত
১৮ই আগস্ট খুলবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: মন্ত্রনালয়
Published: 15 Aug 2024১৮ই আগস্ট আগামী রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। আজ ১৫ই আগস্ট বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী রোববার ১৮ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
আদেশটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সব সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ সিন্ডিকেট সভা ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে,কোটা সংস্কার ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ১৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ৬ আগস্ট থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা জানিয়েছিল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও দেশজুড়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হয়নি।সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যাদেরকে ৩টি বিভিন্ন বিভিন্ন সময়ে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এদিকে, নতুন সরকার গঠনের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।